নিউজ ডেস্ক ::
মিয়ানমারের উগ্রপন্থি রাখাইন ও সামরিক বাহিনীর টার্গেট রোহিঙ্গা যুবকরা। তারা রাখাইনে ফিরলে মিথ্যা মামলা রুজু হবে, গ্রেফতার করে আজীবন কারারুদ্ধ করে রাখা হবে কিংবা গুপ্তহত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে-এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত যুবকদের মধ্যে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন স্বদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। তবে চলাচলের ক্ষেত্রে যাতে বাধা না আসে, স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কিন্তু যতটুকু মনে হচ্ছে তা হবে না। এ অবস্থায় যুবকরা রাখাইনে ফিরে যেতে চায় না।
কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আশ্রিত অধিকাংশ রোহিঙ্গা যুবক বেকার। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম, মনজুর আহমদ, জামাল উদ্দিন, আব্দুল্লাহ ও রাকিব উল্লাহ ঘাসের ওপর বসে তাস খেলছিল। সাংবাদিক দেখেই তারা তাস লুকিয়ে ফেলে। বলল, কাজ নেই, তাই ৪/৫ বন্ধু বসে গল্পগুজব করছিলাম। মিয়ানমারে ফিরে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মনজুর আহমদ জানান, তাদের বাড়ি রাশিডং কাওয়ারবিল গ্রামে। তাদের সহায়-সম্পদ, জমি-জমা, গরু-মহিষ সব আছে। তবে নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা বা কাজ করার মতো কোনো সুযোগ নেই। রাখাইন যুবকদের দেখলেই রাখাইন যুবকরা চোখ রাঙায়। সেনাদের সামনে পড়লেতো আর রেহাই নেই। সেখানে যাওয়ার চাইতে বিদেশে চলে যাব। বিদেশে তার আরো দুই ভাই রয়েছে। এভাবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক মিয়ানমারে না ফেরার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, যুবক শ্রেণির রোহিঙ্গারা না গেলেও তাদের পরিবার-পরিজন ফিরে যাবে।
অদূরে দেখা গেল বেশ কয়েকটি মুদির দোকান। দোকানের মালিক সবাই মিয়ানমারের নাগরিক। সালামাতুল্লাহ নামের এক দোকানি বলেন, নিজ দেশে ফিরতে কে না চায়? তিনি আরো বলেন, সেখানে মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, বিশেষ করে যুবক শ্রেণির রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। লুটপাট করেছে সহায়-সম্পদ, গরু-ছাগল। এমতাবস্থায় সরকার যদি তাদের জানমালের নিরাপত্তাসহ নাগরিক অধিকার আদায় করে দিতে পারে তাহলে যুবক ছেলেরা না গেলেও স্বজনরা স্বদেশে ফিরে যাবে। যুবকেরা কেন যাবে না জানতে চাওয়া হলে অজি উল্লাহ নামের আরেক দোকানি জানান, যুবকরা নাকি সবাই আরসার সদস্য। তাই মিয়ানমার সরকার যুবকদের যে কোনোভাবে মামলা-মোকদ্দমা অথবা খুন, গুম, হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে চায়। অথচ রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়িত করার জন্য মিয়ানমার সেনারাই আরসা’দের বিভিন্ন সহযোগিতা করে সৃষ্টি করেছে। এব্যাপারে রোহিঙ্গা নেতা মুরশেদ আলম জানান, রোহিঙ্গারা যে পাঁচটি দাবি পেশ করেছে ওই দাবিগুলো যদি আদায় হয় তাহলে রোহিঙ্গা যুবকদেরও নিজ দেশে ফিরতে আর কোনো ভয় থাকবে না। তবে সেখানে জাতিসংঘের একটি স্থানীয় প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি নিতান্তই প্রয়োজন বলে ওই রোহিঙ্গা নেতা দাবি করেন।
পাঠকের মতামত: